মো. রুবেল আহমেদ
নিজস্ব বাড়ি না থাকায়, স্বামীর মৃত্যুর পর ৪সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বুলেটবিদ্ধ শহীদ মো. ইমনের মা। অন্যের বাড়ীতে কাজ করে মো. ইমন (২২), মো. সুমন (২০), মো. সুজন (১৬) এবং জুলিয়া (১২)র পড়াশোনা, খাবারসহ অন্যান্য খরচ যোগান মা রিনা বেগম (৪০)। কেমন আছে সেই শহীদ ইমনের পরিবার, সরেজমিনে খোঁজ নিতে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার নলিন গ্রামের কিতাব আলী শেখের বাড়ি যেতেই, বাড়ি থেকে ভেসে আসছিলো কান্নার আওয়াজ। পরে জানা যায়, পুত্র শোকে কাতর মা এভাবেই প্রতিদিন কান্না করেন ইমনের জন্য। ইমনের পিতা জুলহাস উদ্দিন একযুগ আগে মারা যান, পেশায় তিনি ভ্যান চালক ছিলেন।
রিনা বেগম বলেন, ইমন আমাকে কাজ করতে যেতে দিতে চাইতো না, ২০২২সালে এইসএসসি পাশ করার পর হেমনগর ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হয়। পড়াশোনার খরচ যোগাতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে টিউশনি করার পাশাপাশি কাজ করতো। শহীদ হবার আগে সেই সংসারের খরচ চালাতো। তারেক রহমানের থেকে একটা অটোরিকশা পেয়েছি ঐটা এখন মেঝো ছেলে চালায়। টুকু ভাই (সুলতান সালাউদ্দিন টুকু) মাঝে মাঝে খোঁজ নেয়। এছাড়া এখন কেউ খোঁজ নেয় না। ইমনের খুব ইচ্ছে ছিলো সরকারি চাকরি করবে এজন্য সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেছিলো। আমার ছেলে দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, তাই সরকারের কাছে দাবি আমার অন্য সন্তানদের পড়াশোনার দায়িত্ব নেয়ার পাশাপাশি তাদেরকে সরকারি চাকরি দিক, আমাদের বাড়িঘর নাই বাড়ি ঘরের ব্যবস্থা দিন। স্মৃতি রক্ষার্থে যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা রাস্তা ইমনের নামে নামকরণ করা হোক।
ইমনের ছোট ভাই সুজনের দাবি, সরকার আমাদের বাসস্থান নিশ্চিত করুক এবং আমার ভাইয়ের স্মৃতি বিজড়িত নারুচি ষ্টেডিয়াম শহীদ ইমন নামে করা হোক।
নলিন গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন জানান, নারুচি ষ্টেডিয়ামে ইমনসহ আমাদের বন্ধুরা একসাথে খেলাধুলা করতাম, তাই নারুচি ষ্টেডিয়াম শহীদ ইমনের নামে করার দাবি জানাই।
উল্লেখ্য, গত ৪আগস্ট ২০২৪ বিকালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোড়াইয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় ইমন গুলিবিদ্ধ হয়। আহতাবস্থায় প্রথমে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হয়, অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়, আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮আগষ্ট মৃত্যুবরণ করে।

0 মন্তব্য(গুলি):