মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫

হেমনগর রেলস্টেশন বন্ধ এবং জামালপুর এক্সপ্রেসের রুট বদলে ভোগান্তি

জামালপুর এক্সপ্রেস রেলটি আগের রুটে ফেরানোর দাবি

মো. রুবেল আহমেদ.

টাঙ্গাইল ও জামালপুরের ৮ রেলস্টেশনের ৪টির কার্যক্রম দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ থাকায় টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা এবং যমুনার চরাঞ্চলের হাজারো মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। জামালপুর এক্সপ্রেসের রুট পরিবর্তন করায় কম সময় ও কম ভাড়ায় রাজধানী ঢাকা পৌছানো এবং ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস বন্ধ থাকায় ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরে যাতায়াতের সুযোগ কমে গেছে। এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা দ্রুত জামালপুর এক্সপ্রেস পুরোনো রুটে ফেরানোসহ, ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছেন।  

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ময়মনসিংহ-ভূঞাপুর রেললাইনে আন্তঃনগর যমুনা, অগ্নিবীণা, জামালপুর এক্সপ্রেস, ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস, ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস, চট্রগ্রাম মেইল ৩৭ আপসহ ৬টি ট্রেন চলাচল করে। এ লাইনে বন্ধ হওয়া স্টেশনগুলোয় টিকেট কার্যক্রমও বন্ধ। অফিস কক্ষ তালাবদ্ধ। নেই বিদ্যুৎ। হেমনগর রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে গরু,ছাগল, কুকুর বিচরন করে। প্লাটফর্মে ধান মাড়াই আর খড় শুকানো হয়। মাদকসেবীরা নিয়মিত আড্ডা দেয়। দুটি লোকাল ট্রেন এখানে সামান্য সময়ের জন্য বিরতি দেয়। আর যাত্রীরা জনশূন্য ষ্টেশনে নামা মাত্র বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির শিকার হন। ফলে নিরাপত্তার অভাবে যাত্রীরা এসব স্টেশন উপেক্ষা করেন। ফলে ট্রেনের যাত্রী কমে যাচ্ছে। দরিদ্র মানুষ ট্রেন সার্ভিসের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। 

১৮৯৯ সালে চালু স্থাপিত হয় সরিষাবাড়ীর সুপ্রাচীন বাউসী রেলওয়ে ষ্টেশন। এটি বন্ধ করে দেয়ায় এলাকাবাসিরা বিস্মিত। সেই সাথে বয়ড়া, শহীদনগর, বারইপটল, হেমনগর ষ্টেশন জনবল সংকটের অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ। বন্ধ স্টেশনের মূল্যবান সরঞ্জাম বিনষ্ট হচ্ছে। চুরি যাচ্ছে। লোহালক্কড় খুলে নিচ্ছে। ময়মনসিংহ-জামালপুর-টাঙ্গাইল রেলপথে চলাচলকারী ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ২০১২ সালের ৬ই জুলাই উদ্বোধন হয়। ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস মেইল ট্রেনটি ইঞ্জিন সংকটের অজুহাতে ২০২৪ সালের ২৮ মে থেকে বন্ধ। ভূঞাপুর, গোপালপুর, সরিষাবাড়ী উপজেলার চরাঞ্চলের বহু মানুষ কম ভাড়ায় এ ট্রেনে যাতায়াতের সুযোগ পেতো। সাবেক অতিরিক্ত সচিব শামসুল আলম চৌধুরী জানান, ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারী থেকে এ লাইনে আন্তঃনগর ট্রেন জামালপুর এক্সপ্রেস চালু হয়। এটি জামালপুর থেকে সরিষাবাড়ী,তারাকান্দি, হেমনগর, ইব্রাহিমাবাদ ও টাঙ্গাইল হয়ে মাত্র চার ঘন্টায় ঢাকা পৌঁছতো। এ ট্রেনে টাঙ্গাইল ও জামালপুরের চরাঞ্চলের হাজারো মানুষ কম সময় ও কম ভাড়ায় রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে পারতো। কিন্তু রেলওয়ে কতৃপক্ষ ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল যমুনা রেলসেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করলে ট্রেনটির গতিপথ পরিবর্তিত হয়। ফলে মানুষ নিরাপদে ও কম সময়ে রেলভ্রমণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  

এ লাইনে ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী রাশেদুল ইসলাম, সুজন মিয়া ও মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, ট্রেন নিম্ন আয়ের মানুষদের যাতায়াতের সহজ মাধ্যম। ধলেশ্বরী ট্রেনসহ ৪টি রেলওয়ে ষ্টেশন বন্ধ করে দেয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে। 

সরিষাবাড়ীর বয়ড়া স্টেশনের ব্যবসায়ী সুলতান মিয়া জানান, বৃটিশ আমলে চালু এ ষ্টেশনটি বন্ধ রাখায় বহু মানুষের ব্যবসা বানিজ্য ও কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে গেছে। 

স্থানীয়রা জানান, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর স্টেশন নির্মাণের পর স্টেশন মাস্টারসহ চারজন ষ্টাফ কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে স্টেশন ভবন, কোয়ার্টার এবং স্টেশনের মূল্যবান যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র বিনষ্ট হচ্ছে।


 টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর রেলস্টেশন মাস্টার মোঃ আব্দুল কাদের জানান, হেমনগর স্টেশনটি জনবল সংকটের দরুন২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে বন্ধ। তবুও দুটি লোকাল ও জামালপুর এক্সপ্রেস সামান্য সময়ের জন্য এখানে বিরতি দেয়। জামালপুর থেকে ইব্রাহীমাবাদ (যমুনা সেতু পূর্ব) নতুন রেললাইনটি ২০১২ সালের ৩০শে জুন উদ্ভোধন হয়।


 বাংলাদেশ রেলওয়ে (ঢাকা) অতিঃ মহাপরিচালক (অপারেশন) মোঃ নাজমুল ইসলাম জানান, জনবল সংকটের কারনে কিছু স্টেশন বন্ধ। যমুনা সেতু পূর্ব (ইব্রাহীমাবাদ) রেল স্টেশনের নির্মাণ কাজের দরুন ময়মনসিংহ থেকে চলাচলকারী ধলেশ্বরী মেইল ট্রেনটি এখন বন্ধ। ইব্রাহীমাবাদ স্টেশনের নির্মাণ কাজ শেষ হলেই ধলেশ্বরী চালু হবে।

জামালপুর এক্সপ্রেস পুরনো রুটে চালুর বিষয়ে রেলওয়ের ডিজি আফজাল হোসেন মিডিয়া কর্মীদের জানান, ইব্রাহিমাবাদ রেল ষ্টেশনের সিগন্যাল সিষ্টেম সচল হলেই এটি আগের মতো চালুর ব্যবস্থা করা যাবে।


SHARE THIS

Author:

সঠিক তথ্য পেতে সবসময় সমাবেশ ডটকমের সাথে থাকুন।

0 মন্তব্য(গুলি):