মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫

কবরের নীরব সাথী আ. খালেক



মো. রুবেল আহমেদ.

মৃত্যুর নাম শুনলেই শিউরে ওঠে মানুষ। কবরের পাশ দিয়ে হাঁটতে গিয়েও অনেকে ভয় পান। কিন্তু সেই কবরই হয়ে উঠেছে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার নূঠুর চর গ্রামের এক বৃদ্ধের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি আ. খালেক, বয়স এখন সত্তর। জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন কবর খুঁড়ে, খুঁড়েছেন দুই হাজারেরও বেশি কবর।

আ. খালেকের চোখেমুখে নেই কোনো ক্লান্তি, নেই অনুতাপও। বরং গর্বের সুরে বলেন, প্রায় ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে এ কাজ করে যাচ্ছি। আল্লাহ যতদিন শক্তি দেবেন, ততদিন কবর খুঁড়েই জীবন কাটাব।

মৃত্যুর সংবাদ যেন আ. খালেকের কানে পৌঁছে যায় সবার আগে। গ্রামের কোনো মানুষ মারা গেলে অন্যরা জানুক বা না জানুক, তিনি খবর পেয়ে দৌড়ে যান কবরস্থানে। নিজ গ্রাম নুঠুরচর, ঘাটাইল উপজেলার নরজনা কবরস্থান ছাড়াও কয়েকটি কবরস্থানের দায়িত্ব তার কাঁধেই। কোন জায়গায় কবর খোঁড়া হবে, কিভাবে হবে সবটা একাই সামলান এবং কবরস্থানগুলো নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখেন। তিনি মনে করেন, এটি তার দায়িত্ব, মানুষের শেষ আশ্রয় ঠিক করার দায়িত্ব।

তবে কাজের শুরুটা ছিল সহজ নয়। প্রথম দিকে কবর খুঁড়তে গিয়ে হাড়, মাথার খুলি কিংবা পুরোনো কাফনের কাপড় বেরিয়ে এলে আঁতকে উঠতেন তিনি। সাপ, শিয়ালের সাথেও হয়েছে মুখোমুখি। কিন্তু ধীরে ধীরে ভয় কাটিয়ে নিয়েছেন। এখন এসব তাঁর কাছে আর অস্বাভাবিক লাগে না।

গ্রামের মানুষ আ. খালেককে ডাকে গোরস্থানের অভিভাবক। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত এ কাজ চালিয়ে যেতে চান তিনি। তাঁর কাছে মৃত্যু ভয় নয়, বরং মানবসেবার একটি পথ।

কবরের নীরব নিস্তব্ধতার মাঝেই আ. খালেক খুঁজে পান জীবনের শান্তি। অন্যেরা যেখানে কবরকে এড়িয়ে চলেন, তিনি সেখানে খুঁজে পান নিজের অস্তিত্বের মানে।


SHARE THIS

Author:

সঠিক তথ্য পেতে সবসময় সমাবেশ ডটকমের সাথে থাকুন।

0 মন্তব্য(গুলি):